Quantcast
Channel: শরীর – Islami Lecture
Viewing all articles
Browse latest Browse all 16

আমরা কিভাবে অস্তিত্বে এলাম

$
0
0

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি কেন আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি, এবং কিভাবে এই পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল আমরা কিভাবে অস্তিত্বে এলাম?
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে দুই জায়গায় এর উত্তর দিয়েছেন।

يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِن كُنتُمۡ فِى رَيۡبٍ مِّنَ ٱلۡبَعۡثِ فَإِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطۡفَةٍ ثُمَّ مِنۡ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِن مُّضۡغَةٍ مُّخَلَّقَةٍ وَغَيۡرِ مُخَلَّقَةٍ لِّنُبَيِّنَ لَكُمۡۚ وَنُقِرُّ فِى ٱلۡأَرۡحَامِ مَا نَشَآءُ إِلَىٰٓ أَجَلٍ مُّسَمًّى ثُمَّ نُخۡرِجُكُمۡ طِفۡلًا ثُمَّ لِتَبۡلُغُوٓاْ أَشُدَّكُمۡۖ وَمِنكُم مَّن يُتَوَفَّىٰ وَمِنكُم مَّن يُرَدُّ إِلَىٰٓ أَرۡذَلِ ٱلۡعُمُرِ لِكَيۡلَا يَعۡلَمَ مِنۢ بَعۡدِ عِلۡمٍ شَيۡئًاۚ وَتَرَى ٱلۡأَرۡضَ هَامِدَةً فَإِذَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡهَا ٱلۡمَآءَ ٱهۡتَزَّتۡ وَرَبَتۡ وَأَنۢبَتَتۡ مِن كُلِّ زَوۡجٍۢ بَهِيجٍ
হে মানুষ! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দেহে থাক তবে নিশ্চয়ই জেনে রেখো, আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি, তারপর শুক্র থেকে, তারপর আলাকা থেকে, তারপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট অথবা অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট গোশ্ত থেকে। তোমাদের নিকট বিষয়টি সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করার নিমিত্তে। আর আমি যা ইচ্ছা করি তা একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত মাতৃগর্ভে অবস্থিত রাখি। অতঃপর আমি তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি, পরে যাতে তোমরা যৌবনে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু দেয়া হয় এ বয়সেই, আবার কাউকে কাউকে ফিরিয়ে নেয়া হয় হীনতম বয়সে, যাতে সে জ্ঞান লাভের পরও কিছু না জানে। তুমি যমীনকে দেখতে পাও শুষ্কাবস্থায়, অতঃপর যখনই আমি তাতে পানি বর্ষণ করি, তখন তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদগত করে সকল প্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ।
[সূরা হজ্জ: ৫]

মানব সৃষ্টির ক্ষেত্রে এখানে দুটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করতে যাচ্ছি। আমরা সবাই কোথা থেকে এসেছি? আমরা এসেছি আদম (আ:) থেকে। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন –

إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ ٱللَّهِ كَمَثَلِ ءَادَمَۖ خَلَقَهُۥ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ
নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের মত, তিনি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাকে বললেন, ‘হও’, ফলে সে হয়ে গেল।
[সূরা আলি'-ইমরান:৫৯]
وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن سُلَٰلَةٍ مِّن طِينٍ
আর অবশ্যই আমি মানুষকে মাটির নির্যাস থেকে সৃষ্টি করেছি।
[সূরা আল মুমি'নূন:১২]
ثُمَّ جَعَلۡنَٰهُ نُطۡفَةً فِى قَرَارٍ مَّكِينٍ
তারপর আমি তাকে শুক্ররূপে সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি।
[সূরা আল মুমি'নূন: ১৩]
ثُمَّ خَلَقۡنَا ٱلنُّطۡفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقۡنَا ٱلۡعَلَقَةَ مُضۡغَةً فَخَلَقۡنَا ٱلۡمُضۡغَةَ عِظَٰمًا فَكَسَوۡنَا ٱلۡعِظَٰمَ لَحۡمًا ثُمَّ أَنشَأۡنَٰهُ خَلۡقًا ءَاخَرَۚ فَتَبَارَكَ ٱللَّهُ أَحۡسَنُ ٱلۡخَٰلِقِينَ
তারপর শুক্রকে আমি ‘আলাকায় পরিণত করি। তারপর ‘আলাকাকে গোশতপিন্ডে পরিণত করি। তারপর গোশতপিন্ডকে হাড়ে পরিণত করি। তারপর হাড়কে গোশ্ত দিয়ে আবৃত করি। অতঃপর তাকে অন্য এক সৃষ্টিরূপে গড়ে তুলি। অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত বরকতময়!
[সূরা আল মুমি'নূন: ১৪]

তাহলে আমরা কি বুঝলাম?
আমাদের উৎপত্তি মাটি থেকে। আদমকে (আ:) সৃষ্টি করা হয়েছিল মাটি থেকে, এবং হাওয়াকে (আ:) সৃষ্টি করা হয়েছে আদমের (আ:) পাঁজর থেকে।

হাদিসে রাসুল (সা:) বলেছেন, হাওয়াকে (আ:) সৃষ্টি করা হয়েছে আদমের (আ:) পাঁজর থেকে। আদম (আ:) ঘুমিয়ে ছিলেন এবং আল্লাহ আদমের (আ:) পাঁজর থেকে হাওয়াকে (আ:) সৃষ্টি করলেন। আদম (আ:) জেগে ওঠে হাওয়াকে (আ:) দেখে খুশি হলেন। আমরা মানুষরা এরকমই, আমরা একা থাকতে পারিনা। ইনসান শব্দটি এসেছে ‘উনস’ থেকে, আমরা মানুষের মধ্যে সান্ত্বনা এবং সুখ খুঁজে পাই।

আসুন, আরেকবার ফিরে তাকাই আমাদের সৃষ্টির ইতিহাসে। আমরা সবাই এসেছি আদম (আ:) এবং হাওয়া (আ:) থেকে। তবে আমাদের অস্তিত্বে আসার পিছনে অনেক পর্যায়ক্রম আছে। মানব সৃষ্টি হয় তরল থেকে, যা পিঠের পিছন দিক থেকে সজরে বেরিয়ে আসে।

خُلِقَ مِن مَّآءٍ دَافِقٍ
তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে দ্রুতবেগে নির্গত পানি থেকে।
[সূরা আত-তারিক: ৬]
يَخۡرُجُ مِنۢ بَيۡنِ ٱلصُّلۡبِ وَٱلتَّرَآئِبِ
যা বের হয় মেরুদন্ড ও বুকের হাঁড়ের মধ্য থেকে।
[সূরা আত-তারিক: ৭]

পুরুষ এবং মহিলার মিলনের সময় পুরুষের দেহ থেকে লক্ষ লক্ষ শুক্রাণু মহিলার দেহে নিক্ষিপ্ত হয়, সুবহানাল্লাহ কিন্তু তার মধ্যে থেকে মাত্র একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়। এই পর্যায়ে এটাকে নুতফাহ বলা হয়। এটা এত ছোট যে চোখে দেখা যায় না, কিন্তু সাত দিনের মধ্যে তা মহিলার ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্য চলে যায়, এবং তারপরে এটি জরায়ুতে নিক্ষিপ্ত হয়। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে قَرَارٍ مَّكِينٍ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যা কিনা অন্ধকার খালি একটি জায়গা। আর নুতফাহ নামক এই ছোট জিনিসটি জরায়ুতে একটি জায়গা খুঁজে পায়, এবং এর দেওয়ালে আটকে থাকে, আল্লাহ এ পর্যায়ে এটাকে আলাক্বাহ বলেছেন অর্থাৎ জমাট বাধা রক্ত।

এরপর রক্ত ​​মাংসে পরিবর্তিত হয়, এবং এই পর্যায়ে অতিবাহিত সময় আট সপ্তাহেরও কম। এই পর্যায়েকে مُّضۡغَةٍ বলা হয় এবং এর সময়কাল খুব অল্প, এরপর আল্লাহ এর থেকে হাড় তৈরি করেন। এরপর হাড় গুলো পেশী দ্বারা আবৃত হয়, এবং ৮ সপ্তাহের মধ্যে তা ভ্রূনে পরিণত হয়। এভাবে গর্ভ অবস্থার শেষ অবধি পর্যন্ত তা বড় হতে থাকে। তারপর সেটি বিভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করতে থাকে, এর থেকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকশিত হয়। শ্রাবনশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তির বিকাশও এই সময়। এভাবেই আমরা সবাই সৃষ্টি হয়েছি।

فَلۡيَنظُرِ ٱلۡإِنسَٰنُ مِمَّ خُلِقَ
অতএব মানুষের চিন্তা করে দেখা উচিৎ, তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে ?
[সূরা আত-তারিক: ৫]

এটা আমাকে আসলে কি মনে করিয়ে দেয়? হ্যাঁ, এটা ঠিক যে সাইন্টিফিক মিরাকল আমার বিশ্বাসকে মজবুত করে। কিন্তু কুরআন যে সত্য এটা প্রমাণ করার জন্য সাইন্টিফিক মিরাকলের উপর নির্ভর করা উচিত নয়। কুরআন আল্লাহর বাণী, আর এটা যে সত্য তা বলার জন্য আমার কোন বিজ্ঞানীর প্রয়োজন নেই।

আমি যখন কুরআন পড়ি, আমার চারপাশটা অন্তদৃষ্টি দিয়ে অবলোকন করি, বিশেষ করে কুরআনে মানুষের সৃষ্টির প্রক্রিয়াগুলো আল্লাহ যেভাবে বর্ণনা করেছেন তা যখন আমি মাতৃগর্ভের ছবির (আলট্রাসাউন্ড) সাথে মিলিয়ে দেখি, তখন আমি নিজেই নিজেকে বলি আমার কি আর কোন কিছুর দরকার আছে?
আমার ঈমানকে মজবুত করার জন্য আল্লাহ আর কিভাবে আমাকে বোঝাবেন?

আমি আসলে এর থেকে কি শিখবো?
বেশিরভাগ মানুষ কিন্তু বিজ্ঞান এবং এর বিশদ বিবরণে খুব একটা আগ্রহী নয়। কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে এখানে একটি বিশাল বার্তা রয়েছে। আমরা অনেক সময় অহংকারী হয়ে উঠি, আমরা নিজেদেরকে অন্যদের চেয়ে উন্নত মনে করি। মনে আছে কি কোথা থেকে আমাদের শুরু? হ্যাঁ, মাটি থেকেই।

مِنۡهَا خَلَقۡنَٰكُمۡ وَفِيهَا نُعِيدُكُمۡ وَمِنۡهَا نُخۡرِجُكُمۡ تَارَةً أُخۡرَىٰ
মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, মাটিতেই আমি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেব এবং মাটি থেকেই তোমাদেরকে পুনরায় বের করে আনব।
[সূরা ত্বহা-২০: ৫৫]

সুতরাং মূল বার্তা হল কুরআন কোন বিজ্ঞানের বই নয়, যদিও এতে প্রচুর বৈজ্ঞানিক অলৌকিকতা এবং বৈজ্ঞানিক শিক্ষা রয়েছে‌। কুরআনের মূল বার্তা হল কে আল্লাহ, আর কে আমি তা চিনে নেওয়া। তাই যদি আমি মনে করি যে আমি অন্য সবার চেয়ে ভালো, তাহলে অবশ্যই আমি অহংকারী। তখন শুধু এই আয়াতটি পড়াই আমার জন্য যথেষ্ট –

خَلَقۡنَٰكُم مِّن تُرَابٍ ثُمَّ مِن نُّطۡفَةٍ

আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে এবং ময়লা পানির নির্যাস থেকে, এবং আমাদেরকে আবার ফিরিয়ে নেওয়া হবে সেই মাটিতেই।

সিরিজ: কুরআনে সব আছে

মূল: ড: হাইফা ইউনিস

লিখেছেন

ফাহমিনা হাসানাত

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।


Viewing all articles
Browse latest Browse all 16

Latest Images

Trending Articles





Latest Images